‘যস্মিন দেশে যদাচার’ বলে একটা কথা রয়েছে। একদেশে যেটা আবশ্যকীয় কাজ, সেটাই দেখবেন আরেক দেশে রীতিমত অপরাধ! এই যেমন বিয়ের কথাই ধরুন।পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই বিয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়। এক্ষেত্রে এক দেশের কায়দার সাথে অন্যদেশের কায়দা একদমই মেলে না। একইসাথে, কিছু কিছু দেশ আছে যাদের বিয়ের রীতিনীতি একেবারেই অদ্ভুত। এসব নিয়ম শুনলে হয়তো আপনার হাসি পাবে, আবার রীতিমত আক্কেল গুড়ুমও হয়ে যেতে পারে।
ক্রাইং রিচুয়াল অফ চায়না:
চীনের তুজিয়া নামক একটি সম্প্রদায় বিয়ের প্রায় ৩০ দিন আগে থেকে কান্নাকাটি শুরু করে বিয়ের প্রস্তুতি নেয়। ৩০ দিন আগ থেকেই বিয়ের কনে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কান্নাকাটি করে। কনের এভাবে টানা ১০ দিন কান্নাকাটি করার সঙ্গে তার মা-ও যোগ দেয় আর তার দশ দিন পরে তাদের সঙ্গে কনের নানিও যোগ দেয় এবং এভাবে বিয়ের কয়েকদিন পূর্বে পরিবারের সকল নারী সদস্যরা যোগদান করে। আর এভাবেই সবাই দিনে এক ঘণ্টা করে কান্নাকাটি করে আর এই কান্নাকাটি তাদের কাছে কোনো কষ্টের কান্না নয় বরং এটা হচ্ছে গভীর ভালোবাসা আর খুশির কান্না। তারা সবাই একসঙ্গে গান গাওয়ার মতো সুর করে কান্না করে যা অন্য কোনো সংস্কৃতির যে কোনো মানুষ শুনলে ভুল করে ভেবে বসতে পারে যে তারা হয়তো সমস্বরে গান গাইছে।
মানি ডান্স ম্যারেজ:
মানি ডান্স ম্যারেজ সাধারণত পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতে দেখা যায়। এটা প্রথম শুরু হয় ১৯৯০ সালে পোল্যান্ডে। এই রীতিতে বিয়ের সময় কনে নাচতে থাকে আর বর পক্ষের অতিথিরা তাকে টাকা দিতে থাকে কখনো কখনো বর নাচতে থাকে তখন কনে পক্ষের অতিথিরা টাকা দিতে থাকে। আবার কোথাও বিয়ের সময় কনে তার বাবার সঙ্গে নেচে থাকে। চাইলে রিসেপশনের মানুষজনও এই মানি ডান্সে যোগ দিতে পারে, তবে অবশ্যই সেটা টাকা দিয়ে।। সেই টাকা জমিয়ে নবদম্পতির হানিমুনের জন্য খরচ করা হয়।
জার্মানি:
জার্মানিতে বিয়ের আগের দিন রাতে বর-বউয়ের পরিবার ও বন্ধুরা তাদের ঘরের বাইরে কাঁচের জিনিস ছুড়ে ফেলেন। নতুন দম্পত্তিরা সেই ভাঙা কাঁচের টুকরাগুলো ঝাড়ু দিয়ে নতুন ঘরে প্রবেশ করেন। বিয়েতে জার্মানির আরো একটি মজার রীতি হলো, বিয়ের পর নতুন দম্পতি সবার সামনে একটি কাঠের টুকরোকে একসঙ্গে কেটে দেখাবেন। এটি দিয়ে তাঁরা প্রমাণ করেন দুজন সমানভাবে কাজ ভাগাভাগি করে নেবেন এবং তাঁদের মধ্যে বোঝাপাড়া অনেক ভালো।
কোরিয়া:
কোরিয়ায় বিয়ের সময় বর তাঁর শ্বাশুড়িকে একজোড়া পুতুল হাঁস উপহার দিয়ে থাকেন। এই উপহারটি দিয়ে বর, বউয়ের প্রতি তাঁর উদ্দেশ্য এবং আনুগত্য প্রকাশ করেন।
ফিজি:
ফিজির পুরুষদের বিয়ে করতে হলে তিমি মাছের দাঁত সংগ্রহ করতে হবে। কোনো মেয়ের বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে হলে ছেলের কাছে অবশ্যই তিমি মাছের দাঁত থাকতে হয়। সমুদ্রের তলদেশে বসবাস করা তিমি মাছের দাঁত সংগ্রহ করাটা অনেকটাই অসম্ভব কাজ। তাই বাধ্য হয়ে অনেককেই বিয়ে করার জন্য তিমির দাঁত সংগ্রহ করতে ব্ল্যাক মার্কেটে ধরনা দিতে হয়।
জাপান:
জাপানে বিয়ের সময় বর ও বউ তিনটি কাপের পানীয় থেকে তিনবার চুমুক দেন। এরপর তাঁদের বাবা-মা একইভাবে সেই কাপগুলোতে চুমুক দেন। জাপানিদের বিশ্বাস এতে পরিবারের মধ্যে বন্ধন পাকাপোক্ত হয়।
ফিলিপাইন:
দীর্ঘ, শান্তিময় ও ছন্দময় জীবনের উদ্দেশ্যে ফিলিপাইনে বিয়ের দিন বর ও বউ একই সঙ্গে দুটি কবুতর আকাশে ছেড়ে দেন। তাঁরা মনে করেন, কবুতরের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জীবনের দুঃখ-কষ্টও দূর হয়ে যাবে।