পৃথিবীতে এমন
কিছু রাস্তা রয়েছে যেগুলো দেখলেই যে কেউ ভয় পাবে। এসব রাস্তা দেখলে অনেকের মনে
হবে জীবিত ফিরে আসা সম্ভব নয়। কী নেই এই রাস্তাগুলোয়? উঁচু–নিচু পাহাড়, ভয়ংকর খরস্রোতা
নদী, মরুভূমি, যেকোনো সময় তুষার
বা পাথর ও ভূমিধসের ভয়, বন্দুকধারী খুনি ইত্যাদি। পদে পদে মৃত্যু সেখানে ওত পেতে থাকে। অথচ কোনোমতে পার হতে পারলেই আপনি পাবেন
জীবনের সেরা মুহূর্তের স্বাদ।
ভিডিওতে দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন>>
১. গোলিয়াং টানেল/Guoliang Tunnel (চীন):
নওয়াজ উদ্দিন
সিদ্দিকি অভিনীত হিন্দি সিনেমা ‘মাঝি: দ্য মাউনটেনম্যান’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন, একজন মানুষ নিজের
স্ত্রীর মৃত্যুর পর পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়ে কীভাবে নিজ গ্রামের শত শত মানুষের
মৃত্যু রুখে দিয়েছিলেন। চীনের গোলিয়াং টানেলের গল্পটাও একই রকম। মাত্র ৩০০ জন গ্রামবাসীর ব্যবহারের জন্য রাস্তা
বানাতে মিলিয়ন মিলিয়ন অর্থ খরচ করতে অনীহা প্রকাশ করে চীন সরকার। কিন্তু দেশের
অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য উতলা হয়ে থাকা চীনের প্রত্যন্ত এলাকার
গোলিয়াং নামের গ্রামটির ১৩ জন অধিবাসী সরকারের সহায়তা এবং কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই
পাহাড়ের ভেতর দিয়ে সুড়ঙ্গ নির্মাণের বিপজ্জনক কাজ শুরু করেন। খাড়া পাহাড়ের ওপর
বিস্ফোরক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন কয়েকজন শ্রমিক।
কিন্তু দমে না গিয়ে অন্যরা পাথুরে পাহাড়ের পেটে খোঁড়াখুঁড়ি চালিয়ে যান। অবশেষে ১৯৭৭ সালে অনেক রক্ত আর তিক্ত অভিজ্ঞতার
পর এই টানেল সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
গোলিয়াং টানেল
প্রায় ১ দশমিক ২ কিলোমিটার লম্বা একটি সুড়ঙ্গপথ। এই সুড়ঙ্গপথ চীনের হিনান প্রদেশে
অবস্থিত তাইহং পর্বতমালার অন্য প্রান্তের সঙ্গে গোলিয়াং গ্রামকে যুক্ত করে
দিয়েছে।
২. বলিভিয়ার 'Old Yungas' রোড/'Road Of Death:
বিশ্বের সবচেয়ে
ভয়ংকর রাস্তা এটা। স্থানীও লোকজনের কাছে এটা 'মৃত্যু সড়ক' অথবা 'Road
Of Death' নামেও পরিচিত। প্রতিবছর
এই রাস্তায় প্রায় ৩০০-৪০০ লোক মারা যায়। এই রাস্তা এতই সংকীর্ণ যে মাত্র একটি
গাড়ি চলাচল করতে পারে। এই রাস্তাটি লা পাজ এবং করইকো নামক স্থান দুটির সংযোগ সড়ক
হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রাস্তাটি ভূমি থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট উপরে অবস্থিত। রাস্তার
একপাশে পাহাড় থাকার কারনে এই রাস্তায় ভূমি ধস ও পাহাড় ধস হয়ে থাকে।এই রাস্তায়
চলতে গিয়ে আপনার মনে হতে পারে জীবন বুঝি আপনার হাতের মুঠোয়।
৩. কারাকোরাম
হাইওয়ে/ Karakoram Highway (পাকিস্তান ও চীন):
প্রায় ১৬ হাজার
ফুট উঁচুতে যদি কোনো রাস্তা হয়, সেই রাস্তা দিয়ে
গাড়ি চালিয়ে আপনি মজা পাবেন হয়তো, কিন্তু কখন যে
স্বর্গের কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন, তার কোনো হিসাব
আপনার কাছে নাও থাকতে পারে। হ্যাঁ, তেমনই একটি
ভয়ংকরতম রাস্তা কারাকোরাম হাইওয়ে, যেটিকে কেকেএইচ
বা ন্যাশনাল হাইওয়ে-৩৫ নামেও চেনে পৃথিবীর
মানুষ। খতরনাক এই রাস্তা পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে অবস্থিত। এটি প্রায় ১ হাজার ৩০০
কিলোমিটার দীর্ঘ, যার মধ্যে
পাকিস্তানে ৮৮৭ কিলোমিটার এবং চীনে ৪১৩ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে।
কারাকোরাম
পর্বতমালার মধ্য দিয়ে যাওয়া এই রাস্তা চলে গেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়,
নদী, হ্রদ ও হিমবাহর পাশ দিয়ে। যেকোনো সময় যেকোনো
জায়গায় এসব থেকে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।এবার ভাবুন, এই রাস্তা কতটা ভয়ংকর হতে পারে?
এই হাইওয়েটি নির্মাণের
সময় প্রায় ৮১০ জন পাকিস্তানি এবং ২০০ জন চীনা শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই
প্রাণহানির বেশিরভাগই ঘটেছিল মারাত্মক ভূমিধসের ফলে। এই হাইওয়েটির নির্মাণকাজ
শুরু হয় ১৯৫৯ সালে এবং ২৭ বছরের কর্ড ড্রিলিংয়ের পরে ১৯৮৬ সালে এর নির্মাণকাজ
সম্পন্ন হয়। প্রতিবছর অসংখ মানুষ এই
রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায়।
৪. দি আটলান্টিক
ওশেন রোড/ Atlantic Ocean Road:
এই রাস্তায় চলতে
চলতে শুধু একটি কথাই নাকি মনে হয়—সাগরে ভাসছি, নাকি রাস্তায়
চলছি! চারপাশে সাগরের নোনা জল আর হঠাৎ চলন্ত গাড়িতে এসে লাগা ঢেউয়ের ঝাপটা এমনই
দ্বন্দে ফেলে নরওয়ের পশ্চিম উপকূলের ‘আটলান্টিক
মহাসাগর রাস্তা’। আটলান্টিক মহাসাগরের কূল ঘেঁষে বানানো ৮ দশমিক
৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি নরওয়ের
ক্রিসটিয়ানসান্ড ও মোন্ডেকে শহরকে যুক্ত করেছে। এই পথ পেরোতে ছোট-বড় মোট আটটি
সেতু পার হতে হয়। সমুদ্রে যখন বড় বড় ঢেউ খেলে যায়, তখন ভয়ঙ্কর হয়ে
ওঠে রাস্তাটি। ঝড় উঠলে তো কথাই নেই,
ওপথে কেউ গিয়েছে তো মরেছে! এই রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেক মানুষ গাড়িসহ
গভীর সমুদ্রে গিয়ে পরে, আর এভাবেই প্রতিবছর অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে
থাকে।
৫. জোজি লা রোড/ Zoji La Pass (ভারত):
আপনি যদি জানেন,
যে রাস্তায় আপনি
গাড়ি চালাচ্ছেন, সে রাস্তাটি
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১ হাজার ৫৭৫ ফুট উঁচুতে অবস্থান করছে এবং আপনার চোখের
সামনে রয়েছে কয়েক শ বা কয়েক হাজার ফুটের গভীর পাহাড়ি খাদ, পাহাড়ের ওপরের তুষার যেকোনো সময় আপনার গাড়ির
ওপরে ধসে পড়বে, আপনি কী করবেন?
ভারতের জম্মু ও
কাশ্মীর রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে এবং
কাশ্মীরের শোনমার্গ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে লাদাখ ও কাশ্মীরের সংযোগ স্থাপনকারী
জোজি লা রোড বা যাকে ‘জোজিলা পাস’
নামে চেনে সবাই, সেটি এ রকমই একটি
ভয়ংকর রাস্তা। আর এ কারণেই রাস্তাটি বিশ্বের ভয়ংকরতম রাস্তাগুলোর মধ্যে ১ নম্বরে
রয়েছে। একটু অসাবধান
হলেই আপনার গাড়ি ছিটকে পড়বে কয়েক হাজার ফুট গভীর খাদে আর আপনি চলে যাবেন ঈশ্বরের
কাছাকাছি।